বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে মধুর গোয়েন্দা বলা হয় ব্যোমকেশ বক্সীকে। এই গোয়েন্দা চরিত্রটি পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর জনক। এই লেখকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সহজ ও সাবলীলতা। সংক্ষিপ্ত এবং সহজ ভাষার কারণে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পগুলো খুব অল্প সময়ে পড়া হয়ে যায়। আর এসব কারণেই অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যোমকেশ সিরিজটি পাঠকের খোরাক মিটাতে সক্ষম হয়। ব্যোমকেশ বক্সী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন-
নাম– শ্রী ব্যোমকেশ বক্সী
পেশা– সত্যান্বেষী (গোয়েন্দা)
ব্যোমকেশ পুলিশের চাকরি না করেই সত্যের অনুসন্ধানে নিজেকে সর্বদা সচেষ্ট রাখে। গোয়েন্দা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও নিজেকে কখনোই গোয়েন্দা ভাবেন না। গোয়েন্দা কথাটায় তার এক প্রকারের অ্যালার্জি রয়েছে। তিনি নিজেকে বলেন সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী।
বয়স– ২৩ থেকে ২৪ এর মধ্যে
শারীরিক গঠন
ধারালো নাক। লম্বা গড়ন। একটু স্থূল মুখমণ্ডল। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।

দক্ষতা
যাবতীয় জটিল রহস্যের জাল একটার পর একটা খুলে ফেলে সে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল ও শুভ বুদ্ধি দ্বারা। ব্যোমকেশের আছে এক আশ্চর্য বিশ্লেষণী দক্ষতা। সে কথা বলে কম। চেহারাটা বাইরে থেকে এমন করে রাখে যেন সহজে কেউ তার ভেতরটা পড়ে ফেলতে না পারে।
বসবাস
হ্যারিসন রোডের একটি বাড়ীর তিনতলা ভাড়া নিয়ে ব্যোমকেশ বসবাস করেন। এই বাড়িতে ব্যোমকেশ ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি তাঁর পরিচারক পুঁটিরাম। ব্যোমকেশের অনুরোধে অজিত এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
বাল্যকাল
ব্যোমকেশের পিতা স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন ও বাড়িতে সাংখ্য দর্শনের চর্চা করতেন এবং তাঁর মাতা বৈষ্ণব বংশের মেয়ে ছিলেন। ব্যোমকেশের যখন সতেরো বছর বয়স, তখন তাঁর পিতা ও পরে তাঁর মাতা যক্ষ্মা রোগে মারা যান। পরে ব্যোমকেশ জলপানির সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরেও অজিত ও সপরিবারে ব্যোমকেশ হ্যারিসন রোডের বাড়িতে বসবাস করেন।
দাম্পত্য সঙ্গী– সত্যবতী
একটি খুনের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পরিচয় ঘটে কৃষ্ণকলি সত্যবতীর সঙ্গে। সেই পরিচয় পরিণয়ে রূপ নিতে সময় লাগেনি।
সন্তান– খোকা

আগমন
ব্যোমকেশ বক্সীর আবির্ভাব হয় সত্যান্বেষী গল্পে। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে। কলকাতার চীনাবাজার অঞ্চলে পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনার কিনারা করতে ‘বে-সরকারী ডিটেকটিভ’ ব্যোমকেশ বক্সী পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিয়ে অতুলচন্দ্র মিত্র ছদ্মনামে এই অঞ্চলে এক মেসে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই মেসে তাঁর ঘরের অন্য ভাড়াটিয়া অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশের অধিকাংশ গোয়েন্দা গল্পগুলি লিখিয়েছিলেন।
পরিসংখ্যান
ব্যোমকেশ সিরিজের প্রথম গল্প ‘সত্যান্বেষী’। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ চরিত্র নিয়ে ৩৩টি কাহিনী লিখেছেন। এর মধ্যে ১টি অসম্পূর্ণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সত্যান্বেষী, পথের কাঁটা, সীমন্ত-হীরা, মাকড়সার রস, চোরাবালি, অগ্নিবাণ, উপসংহার, রক্তমুখী নীলা, ব্যোমকেশ ও বর’দা, চিত্রচোর, দুর্গরহস্য, চিড়িয়াখানা, রক্তের দাগ, মণিমন্ডন, অমৃতের মৃত্যু, শৈলরহস্য, অচিন পাখি ইত্যাদি। ১৯৩২ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তিনি এই কাহিনিগুলো লেখা হয়েছে। শুধু বইয়ের পাতায় বন্দি নেই ব্যোমকেশ। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে টিভি সিরিজ, সিনেমা ও রেডিও অনুষ্ঠান। সত্যজিৎ রায় ব্যোমকেশ সিরিজের গল্প অবলম্বনে ‘চিড়িয়াখানা’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন যাতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার।
comments (0)